Ticker

6/recent/ticker-posts

উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো

উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য গুলি / নীতি সমূহ-

সাধারণভাবে উদারনীতিবাদ কথাটি ব্যবহার করা এমন একটি সামাজিক ক্ষেত্রে যেখানে সমাজের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন ধরণের সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ব্যক্তির চিন্তা, বিশ্বাস, মতপ্রকাশ, জনসাধারণের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়গুলি উদারনীতি বাদে প্রতিফলিত হয়। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হবহাউস -এর মতে, আত্মপরিচালনার ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তির সমাজ গঠনের বিশ্বাসকেই উদারনীতি বাদ। তবে বিভিন্ন উদারনীতিবাদের প্রবক্তাগণ (জন লক, অ্যাডাম স্মিথ, জেমস মিল, হার্বার্ট স্পেন্সার, ডেভিড রিকার্ডো) -এর বক্তব্য থেকে উদারনীতিবাদের যে নীতি বা বৈশিষ্ট্য গুলি স্পষ্ট হয় তা নিন্মে আলোচনা করা হল -


(১) গণমঙ্গল সাধন করা ঃ উদারনীতি বাদ মতে রাষ্ট্রের প্রধানতম কাজ হল দনমঙ্গল সাধন করা। এই মতবাদ অনুসারে জনসম্মতিই সরকারকে স্থায়ী দায়িত্ব প্রদান করে। রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হলেও ব্যক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কখনও বাঁধা দান করবে না।

(২) ব্যক্তি স্বাধীনতার বিকাশ ঃ উদারনীতি বাদের প্রবক্তাগণ মনে করেন যে, রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে সীমিত শাসনের ওপর, যে রাষ্ট্র অধিক শাসনে বিশ্বাসী সেই রাষ্ট্র কখনো শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। যেহেতু ব্যক্তি স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার সেহেতু রাষ্ট্রকেই এই অধিকার রক্ষা করতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রের আইন হবে উদার, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ববিকাশের পথ সুগম হবে।

(৩)   নাগরিকের অধিকার রক্ষা ঃ নাগরিকের অধিকারগুলি রাষ্ট্রকেই রক্ষা করতে হবে। উদারনীতি বাদ অনুসারে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থায়িত্ব যেহেতু জনসম্মতির ওপরেই নির্ভর করে সেহেতু জনগণের কল্যাণমূলক দিকগুলি রক্ষা করাও রাষ্ট্র এবং সরকারের কর্তব্য। সরকার বা রাষ্ট্র যদি জনগণের কল্যাণ করতে ব্যর্থ হয় তবে সেই সরকারকে অপসারণ করার ক্ষমতা উদারনীতিবাদ অনুসারে জনগণের হাতেই রয়েছে। 

(৪) জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ঃ উদারনীতি বাদের অন্যতম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য বা নীতি হল রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। যেখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রসার ও বাস্তবায়ন ঘটবে জনগণের মঙ্গল বিধানের জন্য। 

(৫) মানবিক সংগঠন গড়ে তোলা ঃ উদারনীতিবাদ অনুসারে রাষ্ট্র একটি মানবিক সংগঠন, যার স্রষ্টা মানুষ। ঈশ্বর রাষ্ট্রকে সৃষ্টি করেননি। 

(৬) আইনের অনুশাসনের ওপর গুরুত্বদান ঃ উদারনীতিবাদ তত্ত্বে আইনের অনুশাসনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। আইনের অনুশাসন তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যথা - (ক) আইন নাগরিক অধিকারকে সংরক্ষণ করবে। (খ) আইনের চোখে সবাই সমান। (গ) কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। 

(৭) রাষ্ট্রীয় সংস্কারমূলক ব্যবস্থা ঃ উদারনীতিবাদ অনুসারে, ব্যক্তি কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখেই রাষ্ট্র সংস্কারমূলক কার্যাবলী গ্রহণ করবে। ব্যক্তির কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখেই আইন, সংবিধান প্রভৃতি সংস্কার করতে হবে। উদারনীতিবাদ অনুসারে ব্যক্তি বা নাগরিক পেয়েছে শাসক নির্বাচনের অধিকার, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, শিক্ষার অধিকার, আইনের অনুশাসন এবং বিচারব্যবস্থায় গণতন্ত্রীকরণ প্রভৃতি। 

(৮) সাংবিধানিক পদ্ধতিতে সরকার বদল ঃ উদারনীতিবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হবে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে, যেখানে কোন হিংসা এবং বিপ্লবের আশ্রয় থাকবে না। সাংবিধানিক পদ্ধতিতে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচনের দ্বারা সরকারের পরিবর্তন করা যায়।

সবশেষে বলা যায় যে, উদারনীতিবাদ রাষ্ট্র, সরকার এবং জনগণকে একসূত্রে আবদ্ধ রাখার একটি উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব। যেখানে সরকার সর্বদা জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। ফলে জনগণ তথা নাগরিক লাভ করবে ব্যক্তি স্বাধীনতা, সামাজিক স্বাধীনতা, পারিবারিক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অবাধ বাণিজ্যের অধিকার প্রভৃতি। 

Post a Comment

0 Comments