ইতিহাস হল সমাজ জীবনের বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের সমাহার। ইতিহাসে ব্যক্তি এবং সমাজ জীবনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে। ইতিহাস হল মানুষের সমাজ দর্পণ যেখানে স্থান পেয়েছে মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিকাশের বিভিন্ন দিক। শিক্ষার্থীর পাঠক্রমিক এবং সহপাঠক্রমিক সেই বিকাশের ধারাকে অব্যাহত রেখে চলেছে। তাই ইতিহাস শিক্ষণ এবং শিখনে উৎসব, মেলা ও প্রদর্শনী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
মেলা ঃ
ইতিহাস শিখনে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উৎসব ও মেলা শিক্ষার্থীর নিজের পরিবেশ ও স্থান সম্পর্কে সচেতন করে ঐতিহাসিক ঘটনার প্রাণবন্ত উপস্থাপনে সাহায্য করে। মেলা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন -
ধর্মকেন্দ্রিক মেলা ঃ ভারতে বিভিন্ন মেলার মধ্যে ধর্মীয় মেলা বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ভারতের নানা জায়গায় নানা সময় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন - মহাশিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী, বড়দিন, ঈদ, বৌদ্ধপূর্ণিমা ইত্যাদি উপলক্ষে মেলা দেখা যায়। ভারতের বহুল প্রচলিত মেলার মধ্যে রয়েছে গঙ্গাসাগর মেলা, কুম্ভমেলা, পুরীর রথের মেলা, রামনবমী উপলক্ষে মেলা আরও নানা মেলা।
ঋতু উৎসব সংক্রান্ত মেলা ঃ ভারতের ঋতু বৈচিত্র্য অনুসারে বিভিন্ন স্থানে মেলা দেখা যায়। যেমন - কৃষি সূচনামূলক পাঞ্জাবের বৈশাখী মেলা, কেরলের ওনাম, তামিলনাড়ুর পোঙ্গল ইত্যাদি।
জাতীয় উৎসব সংক্রান্ত মেলা ঃ জাতীয় উৎসব উপলক্ষে যেমন - স্বাধীনতা দিবস, শিক্ষক দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস প্রভৃতি উপলক্ষেও মেলা দেখা যায়। এইসব মেলার শিক্ষামূলক তাৎপর্য অনেক বেশি থাকে। এর ফলে শিক্ষার্থীর সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
মহান মানুষদের জন্মদিবস উপলক্ষে মেলা ঃ বিভিন্ন মানুষ যারা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দিক থেকে নিজেদের মহান করেছেন তাদের জন্মদিবস উপলক্ষেও মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। যেমন - নেতাজি, গান্ধিজি, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ মহান মানুষদের জন্মদিবস উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন হয়ে থাকে।
সাহিত্যধর্মী মেলা ঃ সাহিত্যিকদের জন্মদিবস বা তাদের কোন বিশেষ প্রতিভা সাধারনের সামনে তুলে ধরার জন্যও অনেক সময় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এইসব মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মে।
আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন সংক্রান্ত মেলা ঃ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রভৃতি বিশেষ দিন গুলিতে বৃহত্তর স্বার্থে পৃথিবীব্যাপী নানা জায়গায় মেলার আসর বসে।
চলচ্চিত্র উৎসব ঃ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসব এবং নাট্য উৎসব পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তত্ত্বগত জ্ঞানের পাশাপাশি বিনোদনমূলক কাজে সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ইতিহাস এবং সমাজ সম্পর্কিত বিভিন্ন নাটক এবং চলচ্চিত্র, যেমন - 'ঔরঙ্গজেব', 'যোধা আকবর', 'চন্দ্রগুপ্ত' ইত্যাদি নাটক দেখতে পারে আবার পরিবেশনও করতে পারে। বিশেষ করে দেখা যায় ইতিহাস ক্লাব এই ধরণের মেলার আয়োজন করে থাকে।
ইতিহাস শিক্ষণ শিখনে মেলার গুরুত্ব ঃ
১. শ্রেণি শিক্ষণে বৈচিত্র্যতা আনে।
২. মেলা শিক্ষার্থীর সাথে সমাজের মিলন ঘটায়।
৩. স্থানীয় ইতিহাস চেতনা সম্পর্কে অধিক গুরুত্ব আরোপ করে।
৪. পাঠ্যবিষয়ের জ্ঞানের ব্যাবহারিক প্রয়োগ দেখা যায়।
৫. নেতৃত্বদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৬. শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক উন্নত করে।
৭. বিনোদনমূলক কাজে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে।
৮. জাতীয় ও আন্তর্জাতিকতা বোধের বিকাশ ঘটে।
৯. মেলায় আয়োজিত বিভিন্ন প্রদর্শনী জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে।
১০. সহযোগিতা, সহানুভূতি প্রভৃতি সামাজিক গুণাবলির বিকাশ ঘটায়।
প্রদর্শনী ঃ
ইতিহাস পঠন-পাঠনে একদিকে যেমন পাঠক্রমের পরিবর্তন হয়েছে তেমনই পাঠদানের বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়ের উন্নতির জন্য সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের উতসাহিত করা হয় এই ধরণের কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য। ইতিহাস ক্লাবের আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষাদানের যে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে তারই অঙ্গ হল প্রদর্শনীর আয়োজন করা।
প্রদর্শনীর গুরুত্ব ঃ
১. শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমি দূর করে শিখনে বৈচিত্র্য আনে।
২. শিক্ষা সহায়ক উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করা হলে শিক্ষার্থীদের পাঠের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
৩. শিক্ষার্থীরা আগ্রহভিত্তিক শিখনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে পারে। তারা নিজেদের আগ্রহ, রুচি অনুযায়ী শিখতে পারে।
৪. প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্ত শৃঙ্খলার নীতি তৈরি হয়।
৫. শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক কর্মযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা পায়।
৬. শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৭. শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি পায়।
৮. জ্ঞানের চাহিদা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৯. তত্ত্বগত এবং ব্যবহারিক জ্ঞানের সংযোগ বুঝতে পারে।
১০. জনসংযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
ইতিহাসে প্রদর্শিত সামগ্রী ঃ
১. পত্রপত্রিকা, জার্নাল, গল্প, নাটক, কবিতা।
২. দুষ্প্রাপ্য বই, বিকল্প বই।
৩. বিভিন্ন ব্যক্তিদের ছবি, বিভিন্ন ঐতিহাসিক চিত্র।
৪. বিভিন্ন সাম্রাজ্যের ম্যাপ, মডেল, চার্ট।
৫. বিভিন্ন ঐতিহাসিক বস্তু।যেমন - পুরনো মুদ্রা, শিলালেখ, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি।
0 Comments